সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে লেখকের দায়িত্বশীলতা>>
লিখেছেন লিখেছেন মামুন ২৮ আগস্ট, ২০১৪, ০১:০০:২৮ দুপুর
প্রথমেই বলে নিচ্ছি, এই লিখাটা কাউকে হেয় করা বা ছোট করার উদ্দেশ্যে লিখছি না। একজন লেখকের লেখনীর ভিতরে পাঠকের জন্য অনেক ম্যাসেজ থাকে। সমাজের জন্য একটা দিকনির্দেশনাও তারা রেখে যান। লেখকের বই পড়ে, ব্লগে কিংবা ফেসবুকের স্ট্যাটাস আপডেট দেখে আমরা অনেক কিছু জানি-বুঝি-শিখি এবং সে অনুযায়ী প্রয়োজনে নিজেরা চলার চেস্টা করি।
এখন এই লেখকদের লেখার ক্ষেত্রে একটা দায়িত্তশীলতা রয়েই যায়। অনেক কিছু চিন্তা ভাবনা করে তাদেরকে আগাতে হয়। কারণ এখন নেটের কল্যানে একজন থেকে অন্যজনে তথ্য শেয়ার হচ্ছে দ্রুত। আর একটা ইনফরমেশন বা ম্যাসেজের ভাল-খারাপ দুটো দিকই একই সাথে সকলে জানতে পারছে।
যেমন ধরুন, একজন লিখেছেন-
"... মাহফুজ সাহেব তুড়ির সাথে সাথে হাতের সিগ্রেটের ছাই ফিল্মী স্টাইলে ফেলে একবুক ধোঁয়া বুকে টেনে নিলেন। স্মার্ট ভঙ্গীতে ধোয়ার রিং বানিয়ে শুন্যে ছেড়ে দিতে লাগলেন। মুগ্ধ হয়ে সালমা রিংগুলোর দিকে তাকিয়ে রইলো। আরো কাছে এসে বলল-
: দারুন জিনিস তো মাহফুজ ভাই! আমাকে শিখাবেন?
: কেন নয়? এই দেখ..."
এইটা গেল এক দিক। এবার অন্য আর একজন লিখলেন-
"... মাহফুজ সাহেব একটু লুকিয়ে সিগ্রেটটা ধরালেন।এখন পাবলিক প্লেসে ধুমপান করা নিষেধ। তারপরও তার মত শিক্ষিত মুর্খরা এখনো প্রকাশ্যে এই আকামটি করে থাকে। সালমার দম বন্ধ হয়ে আসছিল। সে আর থাকতে না পেরে কাছে এসে বলল-
: মাহফুজ ভাই, সিগ্রেটটা ফেলেন। জানেন না প্রকাশ্যে ধুমপান নিষেধ। আপনার চেয়ে আমরা যারা ধুমপান করিনা, তারাই বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।
: স্যরি। ফেলে দিচ্ছি..."
একই সিগ্রেট টানা নিয়ে দুজন লেখকের লেখা দুই রকম ম্যাসেজ দেয় আমাদেরকে। প্রথম লিখায় সিগ্রেট এর প্রতি পরোক্ষভাবে আসক্তিকে উৎসাহিত করা হয়েছে। একজন মেয়ে রিং বানানোর জন্য ওদের নিকট সবচেয়ে অপ্রিয় কর্মটিকে ঘৃনা না করে আরো সেটার কাছে এগিয়ে যায়।
দ্বিতীয় লিখাটিতে সিগ্রেটের প্রতি সরাসরি নেগলেক্ট এবং সমাজ জীবনে এর নেগেটিভ প্রভাবকে তুলে ধরা হয়েছে।
এবার ফেসবুকে লিখে থাকেন এমন একজন ছড়াকারের একটি ছড়ার প্রথম স্ট্যানজা তুলে ধরলাম-
" ইসি-
বল তোমার কয়টা আছে বিচি?
কোন বিচিতে কী তাস খেলো-
ছি ছি-।..."
এ দেশের রাজনীতি নিয়ে আমার কোনো আগ্রহ নেই। আমি পক্ষে বিপক্ষে কোনো মন্তব্যও করতে চাই না কখনো। তবে ইসি- ইলেকশন কমিশনার একটি গুরুত্তপুর্ণ পদ। এরকম একটি পদ নিয়ে একজন বিখ্যাত ছড়াকারের সামাজিক যোগাযোগের একটি সাইটে এমন বিব্রতকর কিছু শব্দ দিয়ে লিখা ছড়াটি আমার মনে খুব খারাপ প্রভাব ফেলেছে। আমার মত আরো অনেকেই এই ছড়াটি নিশ্চয়ই পড়েছেন এবং তাদের শুভবোধের নাসারন্ধ্রে কিছুটা হলেও সুড়সুড়ি দিয়েছে। আমি পু্রো ছড়াটিতে একজন প্রথম শ্রেণীর লেখককে তৃতীয় শ্রেনীর লিখা লিখতে দেখে খুব কষ্ট পেলাম।
সমালোচনা অবশ্যই করা উচিত। কিন্তু তার একটা সীমা এবং প্রেজেন্টেশন থাকবে।তাই সকল লেখকদের কাছ থেকে আরো একটু বেশী দায়িত্বশীলতা আশা করা কি আমার অন্যায় হবে?
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একজনের সাথে আরো বহুজন লিঙ্কড থাকেন। তাই একজন থেকে বহুজনে যে কোনো ম্যাসেজ পৌঁছে যায় খুব দ্রুত। আর এই ম্যাসেজ যদি পজিটিভ হয় তো সবার জন্যই ভালো। আর লেখার ভিতরে নেগেটিভ বার্তা থাকলে তাঁর দ্বারা অন্যদের ভিতরেও নেগেটিভ মানসিকতা গড়ে উঠতে সাহায্য করবে।
সেদিন ফেসবুকে একজনের লেখা পড়লাম যার শুরুটা ছিল এমন " জেনে নিন আপনার পরিবার পরকিয়ায় আসক্ত কিনা! মাথা গরম না করে ধীরে চলুন।" আমিও লেখার শিরোনামের দিকে লক্ষ্য রেখে ডিটেইলসে যাবো না। এই লেখক কিছু পয়েন্টের আলোকে দাম্পত্য-জীবনকে তছনছ করে দেয়া এক বিশেষ মারণাস্ত্র ' বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক' বা 'পরকিয়া'র ব্যাপারে স্বামী বা স্ত্রী আসক্ত কিনা সেটার এক মানদণ্ড নির্ণয় করার চেষ্টা করেছেন। পয়েন্টগুলো হচ্ছে...>>>
>> ফোন বা ইন্টারনেটে আসক্তি
>> আপনার ও পরিবারের পেছনে কম সময় দিলে
>> নতুন কোন নাম
>> অকারণে রেগে যাওয়া
>> যৌনসম্পর্কে উদাসীনতা
>> হঠাৎ নিজের সৌন্দর্য সম্পর্কে অতিরিক্ত সচেতন হয়ে পড়া।
আমি প্রতিটি পয়েন্ট-ই খুব ভালোভাবে পড়েছি... বোঝার চেষ্টা করেছি... চোখ খুলে এবং চোখ বুজে... তারপরও আমি এমন কিছু খুঁজে পেলাম না যে, বর্ণিত টপিকগুলোর দ্বারা আমার বউ কনফার্ম হবে যে, আমি পরকিয়ায় আসক্ত। আমার নিজেকে গিনিপিগ বানিয়ে এই পয়েন্টগুলোর কয়েকটি বিশ্লেষণ করা যেতে পারে।
>> ফোন বা ইন্টারনেটে আসক্তি তো আমার প্রচন্ড। আমি ঘুমানোর সময়েও আমার মোবাইল দিয়ে নেট ইউজ করি। আমার মেকুরানীর পাশে বসেই অবশ্যই। দিনের ১৮ ঘন্টাই বলতে গেলে আমি নেটে থাকি।
>> চাকরির কারণে আমি সপ্তাহে মাত্র ৩২ ঘন্টা সময় আমার পরিবারের পেছনে ব্যয় করি।
> ফেসবুকে আমার নতুন নতুন বন্ধুদের কথা আমার পরিবারকে জানাই। তাঁদের লেখা বিভিন্ন বিষয় বউ এর সাথে শেয়ার করি।
>> আজ বিয়ের ১৫ বছরে এসেও অকারণেই আমি রেগে যাই। এটা আমার ও+ রক্তের কারনেই
>> ... ... ...
>> একদিন আয়নায় দেখি চুল সব সাদা... মেকুরানী নিজেই কালার করতে বলে। বসের চোখে নিজেকে আরো একটু ফিটফাট করারও তো প্রয়োজন আছে। দুই কন্যা প্রায়ই বলে 'পাপা, তুমি বুড়ো হয়ে যাচ্ছ'... তো নিজের সৌন্দর্য সম্পর্কে এভাবেই অতিরিক্ত সচেতন হয়ে পড়েছি।
এখন আমি কি একজন 'পরকিয়ায় আসক্ত' মানুষ বলে গন্য হলাম??
যাই-ই হোক, আমরা বাঙালিরা হলাম সেই পাগলের মতো, যাকে সাঁকো নাড়াতে নিষেধ করাটাই বোকামি। এই লেখাটির লেখক অনেক কষ্ট করেছেন, এগুলো নিয়ে গবেষণা করার ক্ষেত্রে। কিন্তু এগুলো লেখার পরিবর্তে তিনি যদি লিখতেন , পরকিয়ার কুফল সম্পর্কে কিংবা কীভাবে আপনার স্বামী বা স্ত্রীকে 'পরকিয়া' থেকে ফেরাবেন, সেটা-ই হতো পজিটিভ অ্যাটিচিউড। নাহলে এই পয়েন্টগুলোর আলোকে কাউকে 'পরকিয়া' আসক্ত বলাটা ভুল হবে। মহিলাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিয়ে বলছি, তাঁদের মন এই ব্যাপারে খুবই স্পর্শকাতর। আর লেখকের এই লেখাটি পড়ে তাঁরা নিজের স্বামীর ভিতরে এই বদগুণগুলো রয়েছে কিনা, সেটা খোঁজার সময়ে ওই লেখকের মতো অতো বাছ-বিচারের বা গবেষনার ধার ধারবে না। সোজা ... ... ...। তাই মানুষের ভিতরে নেতিবাচক এবং সন্দেহমূলক লেখা সামাজিক মাধ্যমগুলোতে পোষ্ট না করাই ভালো বলে মনে করি। লেখকের দায়িত্বশীলতা বলেও একটা কিছু থাকে। সেখানেও এই নেতিবাচকতাকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।।
বিষয়: বিবিধ
১০৬৮ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আপনার মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ এবং শুভেচ্ছা।
কিন্তু কাউকে বলিনি। আমার কাছে মনে হয় প্রতি টি কথাই একটি অস্ত্র। আমি কাউকে সাবধান করি তবে সে যদি সাবধানতা কেই অস্ত্র মনে করে আমার দিকেই তাক করে।
অনেক অনেক ধন্যবাদ এবং শুভেচ্ছা।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে এবং শুভেচ্ছা।
মন্তব্য করতে লগইন করুন